Table of Contents
ফটোকপি মেশিন কেনার গাইড
ফটোকপির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের অফিস-আদালত অথবা যে কোন ধরনের পেপার ছাপার কাজ করা হয় ফটোকপির মেশিন এর সাহায্য। বিভিন্ন ধরনের সাদা কালো কিংবা রঙিন যেকোনো কাগজের লেখাকে অন্য একটি কাগজে লেখার জন্য ফটোকপি করার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে বাজারে কিন্তু অনেক ধরনের ফটোকপি মেশিন রয়েছে। যেগুলোর একেকটা ফটোকপি মেশিনের দাম ফিচার অনুয়ায়ী কম বা বেশি হয়ে থাকে।
আপনি হয়ত ফটোকপি মেশিন কিনতে চান কিন্তু জানেন না যে, কি কি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলে নিজের চাহিদা, বাজেট, সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী ভালো ও সেরা কপিয়ার নিতে পারবেন। যাতে করে আপনার কাজের জন্য কপিয়ার মেশিনটি পারফেক্ট হয় আর আপনি যেন কপিয়ার ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হতে পারেন। ফটোকপি মেশিন কেনার আগে কি কি বিষয় মাথায় রাখলে ভালো ফটোকপি মেশিন কিনতে পারবে সেসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ফটোকপি মেশিন কেনার গাইড লাইন।
ফটোকপি মেশিন কেন কিনবেন?
আপনি যদি একটি ফটোকপি মেশিন কিনতে চান তাহলে আগেই যেই জিনিসটি মাথায় আসবে সেটা হল, ফটোকপি মেশিন কেন কিনবেন? হ্যাঁ যদি একটি ভাল ফটোকপি মেশিন কিনতে চান তাহলে আগে আপনার জানা উচিত যে, আপনি কি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ফটোকপি মেশিন কিনতে চাচ্ছেন? নাকি নিজের ব্যক্তিগত কোন কাজের জন্য ফটোকপিয়ার মেশিন কিনতে চাচ্ছেন অথবা নাকি নিজের কোন অফিসের জন্য ফটোকপি মেশিন কিনতে চাচ্ছেন?
কেননা যদি আগেই জেনে নিতে পারেন যে, আপনি একটি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ফটোকপি মেশিন কিনতে চাচ্ছেন, তাহলে মধ্যম বাজেটের মধ্যে যেকোনো ধরনের একটি ফটোকপিয়ার মেশিন ক্রয় করে নিতে পারেন। আর যদি আপনি চান নিজের ব্যক্তিগত ছোটখাটো যেকোনো প্রিন্টিং কাজ করার জন্য ফটোকপির মেশিন কেনার প্রয়োজন আছে। তাহলে আপনি চাইলে একেবারে খুব কম বাজেটের মধ্যে একটি ফটোকপি মেশিন নিতে পারেন।
রঙ্গিন নাকি সাদা-কালো ফটোকপি মেশিন
বর্তমান বাজারে কিন্তু দুই ধরনের ফটো কপির মেশিন আপনি পাবেন। একটি হলো সাদাকালো ফটোকপি মেশিন এবং অন্যটি হলো রঙিন ফটোকপি মেশিন। তবে সবচেয়ে বেশি কিন্তু এই সাদা কালো ফটোকপি মেশিন চলে। এই ফটোকপি মেশিনের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে। যেমন দলিল ছাপা, প্রশ্ন উত্তর ছাপা, আইডি কার্ডের ফটোকপি সহ নানান কাজ করা হয়ে থাকে।
আর রঙিন ফটোকপিয়ারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে যদি কখনো রঙ্গিন আইডি কার্ডের পৃষ্ঠা কপি করার প্রয়োজন পড়লে তাহলে রঙ্গিন ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করা হয়। যদিও রঙিন ফটোকপি মেশিন সাদাকালো ফটোকপি মেশিন এর চেয়েও খুব কম কাজে ব্যবহার করা হয়।
মাল্টি-ফাংশন ফটোকপি মেশিন
মাল্টি ফাংশন হচ্ছে এক ফটোকপিয়ার মেশিনের সাহায্যে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ পিসি দিয়ে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ কিংবা ইউএসবি ক্যাবলের সাহায্যে ডকুমেন্ট পাঠিয়ে প্রিন্ট করা যায় তাকেই মাল্টি-ফাংশন সিস্টেম বলে। সকল ধরনের ফটোকপি মেশিনের সাথে এই মাল্টি-ফাংশন সিস্টেম থাকে নাহ। তাই কেনার আগে অবশ্যই এই ফাংশন সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় মেশিন টি ক্রয় করা উচিত।
ডুপ্লেক্স ফটোকপি মেশিন
বর্তমানেব ফটোকপিয়ারের সিঙ্গেল ফাংশন ও ডুপ্লেক্স ফাংশন পাওয়া যায় । যে কপিয়ারের সাহয্যে একই সাথে পৃষ্ঠার দুই পার্শ্ব প্রিন্ট করা যায় সেই সকল মেশিন কে ডুপ্লেক্স ফটোকপি মেশিন বলে। এটি মূলত বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট পেজ এর সিস্টেম। বিভিন্ন ধরনের ফাংশন থাকলে আপনি উক্ত মেশিনটি দিয়ে অতিরিক্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। যেখানে একটি সিঙ্গেল পেজ এক পাশেই পৃষ্টা কপি করে। আবার ডুপ্লেক্স পেজ সিষ্টেমে একটা পেজের দুই পাশেই প্রিন্ট করতে পারবেন।
এইজন্য যদি আপনি কখনো ফটোকপি মেশিন কিনেন তাহলে অবশ্যই এই ফাংশন গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন। অবশ্য এগুলো আপনার চাহিদা অনুযায়ী নিবেন। আপনার কাজের পরিমান যদি বেশি থাকে দুইপাশে একসাথে ফটোকপি করার জন্য ডুপ্লেক্স পেজ সিষ্টেম এর কপিয়ার নিতে পারেন। আর কাজ এর পরিমান কম হলে এক পাশেই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করার সিঙ্গেল ফাংশনের ফটোকপিয়ার নিতে পারেন। তবে সিঙ্গেল ফাংশনের চেয়ে ডুপ্লেক্স ফটোকপি মেশিনের দাম কিছুটা বেশি হয়।
ওয়ার্ম আপ টাইম কেমন হওয়া দরকার?
আপনি যদি একটি ফটোকপি মেশিন কিনেন তাহলে কিন্তু সেটা কাজ করা বাদে বেশি সময় ধরে চালু রাখতে পারবেন না। এতে করে কিন্তু ফটোকপি মেশিন খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর তাই যখন আপনি একটি ফটোকপির কাজ করবেন ঠিক তখনই আপনাকে ফটোকপি মেশিন চালু করতে হবে।
আর এই চালু করতে কিন্তু সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ডের মত সময় লাগবে। আর এই ২০ সেকেন্ড সময়কে বলা হয় ওয়ার্ম আপ টাইম বা উষ্ণ হওয়ার সময়। ২০ সেকেন্ডের ভিতর যে কোন একটি পৃষ্টা কপি করার জন্য মেশিন চালু হয়ে গরম হবে। ফটো কপির মেশিন কেনার আগে দেখবেন যে কোন মেশিনটা কতটা দ্রুত warm-up হতে পারে। যেটা যত বেশি তাড়াতাড়ি ওয়ার্ম আপ হবে সেটা ক্রয় করার প্রায়োরিটি বেশি দিবেন।
মেশিন ডিউটি-সাইকেল কত?
আগেই আমরা বলছি যে প্রতিটা কোম্পানির আলাদা মডেলের ফটোকপি মেশিন থাকে। আর তাই প্রতিটা মডেলের কাজের গতিও এক হয় না। এক্ষেত্রে দেখবেন যে, একটি মেশিন কেনার আগে উক্ত মেশিনটির ডিউটি সাইকেল কতটা বেশি।
ডিউটি সাইকেল হলো মূলত একটি কপিয়ারে প্রতিদিন বা প্রতিমাসে অথবা এক বছরে যতটা পরিমাণ পৃষ্ঠা প্রিন্ট করতে পারবে তার একক। প্রতিটা কোম্পানির আলাদা আলাদা কপিয়ারের ডিউটি সাইকেল ও আলাদা ধরনের হয়। সাধারণত বিভিন্ন কোম্পানির সব ধরনের কপিয়ারে ১,২০০টা পেজ থেকে ১,৮০০টা পৃষ্ঠা প্রতিদিন কপি করা যায়।
যদি আপনি ধরেন একটা নরমাল মডেলের কপিয়ার প্রতিদিন ১,৪০০টা পৃষ্ঠা কপি করতে পারে। তাহলে উক্ত মডেলের কপিয়ারের ডিউটি সাইকেল হবে ১,৪০০ পেজ। আর যদি চান আরও বেশি ফটোকপি করতে তাহলে চাইলে আরো বেশি পৃষ্ঠা কপি করার মডেল দেখে ফটোকপি মেশিন কিনতে পারেন।
ফটোকপি মেশিনের প্রিন্টের গতি
ফটোকপি মেশিন কেনার আগে এটাও দেখবেন যে একটি মেশিন কতটা দ্রুত বা কতটা সময়ে বেশি পেজ প্রিন্ট করতে পারে।আপনি যদি নতুন একটি রঙিন ফটোকপির মেশিন নেন তাহলে সেটাতে এক মিনিটের ভেতর প্রায় ১৫ থেকে ২০টি পেজ কপি করতে পারবে।
অন্যদিকে সাদাকালো প্রিন্টার গুলোতে ২৫ থেকে ২৫টা পেজ প্রতি মিনিটে কপি করে থাকে। যেহেতু আপনি নতুন একটি ফটোকপির মেশিন কিনবেন তাই সবসময় খেয়াল রাখবেন যে উক্ত মেশিনটিতে প্রতি মিনিটে কত পেজ প্রিন্ট করতে পারে।
কি কি ব্র্যান্ডের ফটোকপি মেশিন আছে?
বর্তমান বাজারে অনেক ধরনের ফটোকপি মেশিন রয়েছে আর। এই মেশিন গুলোর দাম বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যালু ও বিভিন্ন ফিচার এর কারণে কম বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে ভিতরে ভালো মানের জাপানিজ কম দামে তোশিবা ব্রান্ডের ফটোকপি মেশিন বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও আরো অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ক্যানন, কনিকা শার্প, ও রিকোর মত জনপ্রিয় ফটোকপি মেশিন।
যদি আপনি ফটোকপির মেশিন কিনতে চান তাহলে উপরের প্রত্যেকটা বিষয় আপনার নিজের চাহিদা অনুযায়ী, বাজেট অনুযায়ী ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী সবচেয়ে সেরা ফটোকপি মেশিনটি ক্রয় করতে পারবেন।
ফটোকপি মেশিনের দাম
ফটোকপি মেশিনের দাম প্রিন্টারের চেয়ে বেশি হয় কারণ প্রিন্টার দিয়ে একসাথে অনেক পেজের কপি, স্ক্যান, প্রিন্ট করা সম্ভব হয় না যা কপিয়ার মেশিন দিয়ে সম্ভব। ফটোকপি মেশিনের দাম নির্ভর করে এর ব্র্যান্ডের উপরে। প্রত্যেক ব্র্যান্ডের ফটোকপি মেশিনের দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে যেকোন ব্র্যান্ডের ফটোকপি মেশিনের ফাংশন ও কাজের দক্ষতা যত বেশি হবে এর দাম তত বারবে। সুতরাং, ফটোকপি মেশিন কেনার আগে অনলাইন থেকে এর বর্তমান দাম জেনে নিয়ে ক্রয় করা ভালো তাহলে মেশিন দাম সম্পর্কের পূর্বে থেকেই ধারনা পাওয়া যাবে।