প্রজেক্টর কেনার টিপস

প্রজেক্টর কেনার টিপস

বর্তমান সময়ে প্রোজেক্টর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। এটি এখন থিয়েটার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ ও বড় বড় কর্পোরেট অফিসে নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু প্রোজেক্টর এখন দৈনন্দিন জিবনের একটা অংশ হয়ে দারিয়েছে তাই এটি কেনা ও ব্যবহারের আগে  প্রজেক্টর কেনার টিপস সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো মানের প্রোজেক্টর নির্বাচন করা সহজ হবে পাশাপাশি প্রোজেক্টরের দাম বেশি রাখার সম্ভাবনা কম থাকে।

প্রোজেক্টর কি?

প্রোজেক্টর হল এমন একটি ইলেকট্রো-অপটিকাল ডিভাইস যার সাহায্যে ভিডিও, ছবি ও বিভিন্ন তথ্য বড় স্ক্রিনে প্রদর্শণ করা হয়। প্রোজেক্টরের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সেমিনার, সভা, ক্লাসরুম, ট্রেইনিং, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রোজেক্টরের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। প্রোজেক্টরের প্রধান কাজ হচ্ছে কম্পিউটারের ডেটা বহুগুন বড় করে স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রর্দশন করা। একসাথে অনেক মানুষের সামনে বড় করে ডেটা প্রর্দশন করার জন্য প্রজেক্টরের বিকল্প নেই।

প্রোজেক্টরের প্রকারভেদ

বর্তমান সময়র প্রধানত ২ ধরনের প্রজেক্টির পাওয়া যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে ডিএলপি বা ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং এবং অন্যটি হচ্ছে এলসিডি বা লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে। এবারে এই দুই ধরনের প্রোজেক্টরের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জেনে নেওয়া যাক।

এলসিডি বা লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লেঃ এলসিডি টাইপের প্রোজেক্টর সাধারণত পোলারাইজড আয়নার সমন্বয়ে কাজ করে থাকে যা শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট আলোকে প্রতিবিম্বি করেই সৃষ্টি হয়। এলসিডি প্রযুক্তির ফলে লাল, নীল ও সবুজ প্রতিটি চ্যানেলকে আলাদা করে দেয় এবং পরে এলসিডি প্যানেল পেরিয়ে প্রিজমের মাধ্যমে পুনরায় তা রঙিন ভিডিওতে রুপান্তর করে প্রদর্শন করে।

ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং বা ডিএলপিঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক প্রোজেক্টর হচ্ছে ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং বা ডিএলপি প্রজেক্টর। এটিতে কে-ওয়ান চিপ ও থ্রি-চিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এর প্রতিটি চিপে কয়েক মিলিয়ন সংখ্যক আয়না থাকে যা প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ্যাধিকের মতো আলোক প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারে। ওয়ান-চিপ ডিএলপি প্রজেক্টর 16 মিলিয়নেরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে যখন থ্রি-চিপ মডেল 35 ট্রিলিয়ন এরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে এর ফলে ডিএলপি প্রজেক্টর ঝকঝকে জীবন্ত ছবি প্রদান করতে পারে।

প্রোজেক্টরের ব্যবহার

যে সকল জনসভা বা অনুষ্ঠানে অধিক মানুষের সমাগম হয় সে সকল স্থানে মানুষের মনোযোগ বা দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রোজেক্টরের প্রয়োজন পরে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলা দেখতে গেলে ছোট স্ক্রিনে বেশি আনন্দ উপভোগ করা যায় নাহ তাই এর বিকল্প হিসেবে সেখানে বড় স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এর আনন্দটা অনেকাংশ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া অনেকে একসাথে বসে একই সময়ে ভিডিও দেখতে পারে।

প্রোজেক্টরের স্ক্রিনের ব্যবহার

দুই ভাবে প্রজেক্টরের স্ক্রিন ব্যবহার যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রজেক্টরের পর্দার উপর প্রতিবিম্ব ফেলে ভিডিও প্রদর্শণ অন্যটি হচ্ছে ঘরের পাকা দেয়ালে প্রোজেক্টরের আলোর প্রতিবিম্ব ফেলেও প্রদর্শণ করা যায়। এক্ষেত্রে দেয়ালের রঙ অবশ্যই সাদা বা অফ হোয়াইট রঙের হতে হবে, অন্যথায় আলোর প্রতিফলন সঠিকভাবে হবে নাহ। আলোর সঠিক প্রতিফলন না ঘটাতে পারলে কাংক্ষিত মানের ভিডিও পাওয়া যাবে না। ঘরের দেয়াল সাদা কালারের রঙ করা থাকলে প্রজেক্টর দিয়ে ভিডিও তৈরি করা যাবে সহজেই ফলে প্রজেক্টরের জন্য বাড়তি পর্দা কেনার খরচ কমে যাবে।

প্রোজেক্টরের স্ক্রিন সেট আপ

যদি প্রোজেক্টরের স্ক্রিনের জন্য ঘরের দেয়াল ব্যবহার করেন তাহলে দেখার সুবিধার জন্য প্রজেক্টরটি নির্দিষ্ট দুরত্বে বসাতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে প্রোজক্টরের ফোকাস লাইট/লেন্স দেয়ালের সঠিক স্থানে পরেছে কি নাহ। দেওয়ালের যেস্থানে ফোকাস লাইট পরবে সে স্থানে যাতে কোন প্রতিবন্ধক না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যথায় দেয়ালে সঠিক ছবির ফোকাস হবে না। প্রোজেক্টরের পর্দার ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম মেনে সেট প্রোজেক্টর সেট করতে হব। প্রজেক্টর যতই দূরে স্থাপন করবেন, দেয়ালে বা পর্দায় ততটাই ছবি বড় করে আসবে তবে নির্দিষ্ট দুরত্বের বেশি হলে ভিডিও বা ছবির রেজ্যুলিউশন খারাপ আসবে ফলে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাবে নাহ। পক্ষান্তরে প্রজেক্টরের উৎস হতে পর্দা যত কাছাকাছি আসবে ছবি বা ভিডিও তত ছোট হবে। প্রোজেক্টরের ছবি ছোট বা বড় হওয়াটা নির্ভর করে ফোকাস দুরত্ত্বের উপরে।

প্রজেক্টরের স্ক্রিন সিলেকশন

প্রজেক্টরের স্ক্রিন সিলেকশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুই ধরণের প্রজেক্টর পর্দা রয়েছে যেমন একটি ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে তৈরি আর অপরটি স্ট্যান্ড পর্দা যার দাম তুলনামূলকভাবে একটি বেশি। ডিজিটাল ব্যানার এর পর্দার সামনের অংশ সাদার পিছনের অংশ কালো হয়। প্রজেক্টরের স্ক্রিন সাইজ নির্ভর করে প্রোজেক্টরের লুমেনসের উপরে। প্রোজেক্টরের লুমেনস যত বেশি প্রোজেক্টরের পর্দা সে অনুপাতে বড় হলে ছবি বা ভিডিও কোয়ালিটি ঠিক থাকে। যদি বাইরে যে কোন আউটডোরে প্রদর্শনের জন্য প্রজেক্টর ডিভাইসের সাথে মানের উপর পর্দার সাইজ নির্বাচন করা উচিৎ হবে। প্রোজেক্টরের পর্দা সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এর ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এগুলো সাধারণ কাপড়ের মতই ভাজ করে যে কোন স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।

 

প্রোজেক্টর ব্র্যান্ড
প্রোজেক্টর ব্র্যান্ড

 

প্রজেক্টরে যে সকল ডিভাইস ব্যবহার করা যায়

আধুনিক প্রজেক্টরে সব সংযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ প্রজেক্টরগুলো সব রকম ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি এবং মোবাইল ফোন এর সাহায্যে ব্যবহার করা যায়। যেমন ধরুণ কেব্​ল টিভি থেকে সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রজেক্টরে একটা পোর্ট রয়েছে। প্রজেক্টরের সঙ্গে একটা তার দেওয়া থাকে আর এই তারটির একটি অংশ ডিশের সংযোগ আছে এমন টিভিতে এবং আরেকটি অংশ প্রজেক্টরে লাগাতে হবে। স্মার্ট টিভি যেটাতে ইন্টারনেট সংযোগ ডীয়ে ব্যবহার করা যায় সেটাতে প্রজেক্টর সুবিধাও পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে আধুনিক প্রজেক্টরগুলো দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বড় স্ক্রিন তৈরি করে ভিডিও দেখা যায়।। এর জন্য উভয় ডিভাইসে ব্লুটুথ ফাংশন অন করে ভিডিও শেয়ার করতে হয়। এ ছাড়াও আপনা চাহিদা যদি ছোট হয় তাহলেবর্তমান বাজারে কিছু ছোট আকারের প্রজেক্টর পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে সরাসরি মোবাইল ফোনের পেছনে ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়। এতে করে আপনার মোবাইল ফোনে যা চালু করা হবে প্রোজেক্টরের স্ক্রিনে তা–ই দেখা যাবে। প্রোজেক্টরের স্ক্রিন ছোট হওয়ায় এর দাম তুলনামূলক কম।

প্রোজেক্টর সম্পর্কে আরো জানুন

প্রজেক্টর কেনার যে সকল বিষয় লক্ষ্য রাখবেন?

প্রজেক্টর কেনার আগে অনেক বিষয়ে লক্ষ্য রেখে কিনতে হয়। এর মধ্যে প্রজেক্টর কেনার টিপস এর  বিষয় বেশি গুরত্ব দেওয়া উচিৎ তা হলঃ-

শব্দ কোয়ালিটি

প্রজেক্টরে যেহেতু ভিডিও বড় স্ক্রিনে দেখতে হয় তাই প্রোজেক্টর কেনার আগে সাউন্ড কোয়ালিটি অবশ্যই ভালো হতে হয় নাহলে প্রজেক্টরের ভিডিও দেখার প্রকৃত আমেজ পাওয়া যায় না। যদিও প্রজেক্টরে বিল্ট-ইন স্পিকার থাকে তবে এর সাউন্ড কোয়ালিটি হল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর শব্দ সাধারনত কম হয়ে থাকে তাই উচ্চ শব্দের জন্য আলাদা স্পিকার ব্যবহার করতে হয়। স্পিকারের চেয়ে আরো সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য হোম থিয়েটার সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন।

প্রজেক্টরের দাম ও ব্র্যান্ড সিলেকশন

বর্তমান বাজারে ইপসন আসুস, লেনোভো, ভিভিটেক, ক্যাসিও, হিটাসি, প্যানাসনিক, তোশিবা, বেনকিউ, ভ্যালুটপসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর পাওয়া যায় কেনার আগে প্রোজেক্টর ব্র্যান্ড সিলেকশন করুণ। এই সকল প্রজেক্টরের দাম ব্র্যান্ড ভেদে কম বা বেশি হতে পারে। তবে প্রোজেক্টরের লুমেন যত বেশি হবে প্রজেক্টরের দাম ততবেশি হবে। কম দামের মধ্যে কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর যেমন শাওমি, চেয়ারলেক্স ব্যান্ডের প্রোজেক্টর পাওয়া যায়।

প্রোজেক্টর ব্যবহারের সতর্কতা

১। প্রজেক্টর চালু করার পর কখনও সরাসরি বিদ্যুতের কানেকশন বন্ধ করবেন না।

২। বন্ধ করারর সময় প্রজেক্টরের পাওয়ার বাটন প্রেস করে বন্ধ করবেন এবং কখনই সাথে সাথে পাওয়ার কড খুলে নেবেন না। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন প্রজেক্শান বন্ধ হবার পরও একটি লাল বাতি টিপ টিপ করে জ্বলছে। এটা স্থির হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন,তারপর পাওয়ার কড খুলবেন।

৩। বন্ধ করে সাথে সাথেই প্রজেক্টর ব্যাগে বা বন্ধ কোন বাক্সে বা আলমিরাতে রাখবেন না। কারন প্রজেক্টর কিছুক্ষন চললে প্রচন্ড গরম হয়ে যায়, তাই ব্যাগে বা বন্ধ বাক্সে রাখলে ঘেমে গিয়ে প্রিজম অথবা লেন্স নষ্ট হতে পারে যা প্রায় মেরামত অযোগ্য। তাই অন্তত ৩০ মিনিট খোলা জায়গায় রাখবেন।

৪। প্রজেক্টর বা ল্যাপটপ কেনার পর দেখবেন এর বাক্সে একটি ছোট্ট কাগজের প্যাকেট দেয়া থাকে, যার মধ্যে কিছু পাউডার জাতীয় পদার্থ থাকে, এটা কখনই ফেলবেন না। এটা আসলে সিলিকা জেল পাউডার যা পানি শোষন করে। এটা ঘাম হতে প্রজেক্টরকে রক্ষা করবে। একই জাতীয় পদার্থ গুড়ো দুধের কৌটাতেও থাকে আপনার টা হারিয়ে গেলে আপনি সেটাও ব্যবহার করতে পারেন।

৫। নরবরে টেবিলে প্রজেক্টর রেখে চালানো থেকে বিরত থাকুন।

৬। চালু অবস্থায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে কখনই সরাবেন না।

৭। চালু অবস্থায় আমরা অনেক সময় প্রজেক্শান ঢেকে দেবার জন্য বই বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করি। এটা কখনই করবেন না। এতে লেন্সের মারাক্তক ক্ষতি করে।

৮। লো ভোল্টেজে চালালো ঠিক হবে না।

৯। লুজ কানেকশন আছে এমন পয়েন্টে প্রজেক্টর চালাবেন না।

১০। প্রজেক্টর ভাল কাজ পেতে চাইলে VGA ক্যাবলের পরিবর্তে HDMI ক্যাবল ব্যবহার করবেন।

১১। ধুলো বালি যাতে না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সম্ভব হলে ব্লোয়ার মেশিন দ্বারা বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে পরিস্কার করবেন।

 

উপরক্ত বিষয় গুলো জানা থাকলে একটি ভাল মানের প্রোজেক্টর কিনতে সাহায্য করার পাশাপাশি কিভাবে একটি প্রজেক্টর দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যাবে সে সম্পর্কেও মোটামুটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। আর প্রোজেক্টরের দাম সম্পর্কে জানতে হলে বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট আছে সেখান থেকে জেনে নিতে পারবেন।

By tech

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!