গরমে আরাম এয়ার কন্ডিশনার

গরমে আরাম এয়ার কন্ডিশনার

সময় যত যাচ্ছে গ্রীষ্মের তাপদাহ ততই বেড়ে চলছে। এই মাত্রাতিরিক্ত তাপ থেকে শরীরকে একটু আরাম দিতে শীতল বা ঠান্ডা বাতাস আকাংক্ষা সবারই থাকে। এখন এই গরমে আরাম এয়ার কন্ডিশনার বা এসি কিভাবে দিবে সে সম্পর্কে জানা দরার সবারই। বর্তমান সময়ে অফিসের কিংবা ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বা এয়ার কুলার ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এয়ার কুলারের দাম এর চেয়ে এয়ার কন্ডিশনারের দাম তুলানামূলক বেশি তারপরেও এয়ার কুলারের চেয়ে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার তুলানা মূলক বেশি । আজকে এয়ার কন্ডিশনার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।

এয়ার কন্ডিশনার বা এসি কি ?

এয়ার কন্ডিশনার হচ্ছে এমন একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস যা ঘরের অভ্যন্তরীন বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরী করে। এটি যেহেতু বৈদ্যুতিক ডিভাইস সেহেতু এটি চালানো জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এয়ার কন্ডিশনার নিয়ন্ত্রণ করা হয় রিমোট এর সাহায্যে।

এয়ার কন্ডিশনারের প্রকারভেদ 

এয়ার কন্ডিশনার সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে। প্রত্যেক ধরনের এসির ধরণ ও কার্যকারিতা ভিন্ন। এয়ার কন্ডিশনার সাধারণত ধরনের হয়ে থাকে একটি হলো মনোব্লক,  অন্যটি স্প্লিট সিস্টেম।

১। মনোব্লক এয়ার কন্ডিশনার

এ ধরনের এয়ার কন্ডিশনারের ইউনিটটি এক ব্লকের হহয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে পাওয়া যায় উইনডো এসি ও পোর্টেবল এসি গুলো  মনোব্লক এয়ার কন্ডিশনারের অন্তর্ভুক্ত ।

২। স্প্লিট সিস্টেম এয়ার কন্ডিশনারঃ

স্প্লিট সিস্টেমস এয়ার কন্ডিশনারের ইউনিট দুই ব্লক বিশিষ্ট হয় ব্লক দুটি হচ্ছে ইনডোর এবং আউটডোর। স্প্লিট এসির ইনডোর ইউনিট এর কাজ হচ্ছে ঘরের ভিতরে শীতল বাতাস প্রদান করা এবং আউটডোর ইউনিটের কাজ হলো বাতাস ঠান্ডা করা ও রিসাইকেল করা।

এয়ার কন্ডিশনার এর ধরণ

বাংলাদেশে জনপ্রিয় ৪ ধরনের এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ব্যাবহার দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে

১। স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার

২। উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার

৩। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার

৪। পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার

১। স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার

এসি এর অবকাঠামো দিক থেকে স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার সবচেয়ে ভালো। স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনারের দুইটি ভাগে বিভক্ত একটি হচ্ছে ইনডোর অন্যটি আউটডোর। স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনারের ইনডোর অংশের কাজ হচ্ছে বাহিরের বাতাসকে ঘরের ভিতরে সঠিক ভাবে সঞ্চালন করা। এট সাধারণত ঘরের দেয়ালে উপরের দিকে মাঝামাঝি অংশে সেটিং করতে হয় ফলে ঘরের ভিতরে সমান ভাবে সকল স্থানে শীতল বাতাস সরবরাহ করতে পারে।  এবং স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনারের আউটডোর অংশের কাজ হচ্ছে এটি বাহিরের গরম বাতাস সংগ্রহ করে কম্প্রেসারের মাধ্যমে গরম বাতাসকে ঠান্ডা করে ঘরের ভিতরে প্রেরণ করে। এসির আউটডোর অংশটি ঘরের বাহিরে ফাকা স্থানে স্থাপন করতে হয় যাতে বাহিরের বাতাসকে ভালভাবে সংগ্রহ করতে পারে।

 

স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার
স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার

 

স্প্লিট টাইপ এসির দাম

স্প্লিট টাইপ এসির দাম নির্ভর করে এর ক্যাপাসিট উপরে। ক্যাপাসিতি যত বেশি হবে এসির দাম তত বেশি হবে। স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার  সাধারণত ১ টন, ১.৫ টন, ২ টন, ২.৫ টন, ৩ টন ও ৫ টন ক্যাপাসিটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ১ টন এসির দাম কম হয়, ১.৫ টন এসির দাম ১ টন এসির দাম এর চেয়ে কিছুটা বেশি, ২ টন এসির দাম ১.৫ এসির দাম এর চেয়ে সামান্য কিছু বেশি হয়, ২.৫ টন এসির দাম ৩ টন এসির দাম ও ৫ টন এসির দাম পর্যায়ক্রমে বেশি হয়। ক্যাপাসিটির সাথে সাথে এয়ার কন্ডিশনারের দাম নির্ভর করে এসির ব্র্যান্ডের উপরে।  কম দামের এসি এর মধ্যে মিডিয়া এসির দাম, শাওমি এসির দাম, সিগো এসির দাম ও ক্যারিয়ার এসির দাম কম।  মিড বাজেটের ব্র্যান্ডের মধ্যে গ্রী এসির দাম, ওয়ালটন এসির দাম, পানাসনিক এসির দাম ও র‌্যাংগস এয়ার কন্ডিশনারের দাম কাছাকাছি থাকে। ছাড়াও ভালো মানের এয়ার কন্ডিশনারের জন্য ভালো মানের ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলো স্যামসাং এসির দাম, এলজি এসির দাম ও হিটাছি এসির দাম অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়।

২। উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার

উইন্ডো টাইপ এয়ার কন্ডিশনারের একটি মাত্র অংশ থাকে যার কিছু অংশ ঘরের ভিতরে এবং কিছু অংশ ঘরের বাহিরে দিকে রেখে সেটিং করা হয়। এর জন্য একটু বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। উইন্ডো এসি এর দুইটি পার্ট থাকে একটিএর সাহায্যে ঘরের বাহিরের গরম বাতাস সংগ্রহ করে কম্প্রেসারের সাহায্যে গরম বাতাসকে ঠান্ডা করে অপর অংশ দিয়ে তা ঘরের ভিতরে প্রবাহিত করে। উইন্ডো এসিতে একক অংশে সকল কাজ করার জন্য একটু শব্দ তৈরি হয়। যেটা অনেক জনের কাছে কিছুটা বিরক্তিকোর মনে হতে পারে।

 

উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার
উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার

 

উইন্ডো এসির দাম

উইন্ডো এসি এর ও এর ক্যাপাসিটির উপরে নির্ভর করে। উইন্ডো এসির ক্যাপাসিটি ১ টন, ১.৫ টন, ২ টন, ২.৫ টন, ৩ টন ও ৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা কম থাকায় সকল ব্র্যান্ড এই ধরনের এসি উৎপাদন করে না। এসি কেনার আগের কতটুকু জায়গার জন্য এসির প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করে উইন্ডো টাইপ এসি কিনবেন। এতে করে আপনার অল্প টাকার মধ্যে ভালো এসি কিনতে পারবেন।

৩। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার

সেন্ট্রাল এসি এমন এক ধরনের এসির যা বৃহৎ আকারে ব্যবহৃত হয়। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার এর ব্যবহার তখনি হয় যখন অনেক বড় স্থানের জন্য শীতল বাতাস সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এই ধরনের এসি সাধারণত ওপেন স্পেস,কর্পোরেট অফিস কিংবা বড় শপিংমলে ব্যবহার করা হয়। সেন্ট্রাল এসির পরিমাপ সাধারণত জায়গার স্কয়ার ফিট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ছোট অফিস কিংবা বাসা বাড়ি কিংবা দোকানের জন্য এই ধরনের এসি প্রযোজ্য নয়।

 

সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার
সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার

 

সেন্ট্রাল এসির দাম

আমরা পুর্বেই জেনেছি যে, যেকোন ধরনের এসির দাম নির্ধারন হয় এর দাম ও ব্র্যান্ডের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনারের দাম নির্ধারিত হয় কতটুকু স্থানের জন্য এটি সেট-আপ করতে হবে তার উপরে। তবে স্থানের উপরে তার ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করা হয়।

৪। পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার

পোর্টেবল টাইপ এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার ও চাহিদা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার যে কোন স্থানে সেট করে শীতল বাতাস প্রাবাহ করা যায়। যেহেতু এয়ার কন্ডিশনার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাই এটি পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার নামে পরিচিত। পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার ১ টন থেকে ৫ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। এধরনের এসিতে চাকা লাগানো থাকে তাই এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নেওয়া সহজ হয়।

 

পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার
পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার

 

পোর্টেবল এসির দাম

পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার সাধারণত ১ টন, ১.৫ টন, ২ টন, ২.৫ টন, ৩ টন ও ৫ টন ক্যাপাসিটি পর্যন্ত হয়। ১ টন পোর্টেবল এসির দাম , ১.৫ টন পোর্টেবল এসির দাম, ২ টন পোর্টেবল এসির দাম, ২.৫ টনএসির দাম, ৩ টন এসির দাম, ৫ টন এসির দাম নির্ভর করে এর ব্র্যান্ডের উপরে। তবে অন্যান্য টাইপ এসির তুলনায় পোর্টেবল টাইপ এসির দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। কেনার আগে যাচাই করে ক্রয় করা ভালো।

এসির বিদ্যুৎ খরচ

যেহেতু এয়ার কন্ডিশনার একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস তাই এটি চালানোর জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এসির পাওয়ার ক্যাপাসিটি বেশি হওয়ায় এর বিদ্যুৎ খরচের পরিমান বেশি হয়। আর বিদ্যুৎ খরচ বেশি হলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। বিদ্যুতের খরচের দিক থেকে এয়ার কন্ডিশনারকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন ইনভার্টার এসি ও নন-ইনভার্টার এসি।

ইনভার্টার এসি

এসিতে আধুনিক একটি প্রযুক্তি হচ্ছে  ইনভার্টার সিস্টেম  যার সাহায্যে প্রয়োজন অনুযায়ী কম্প্রেসারকে চালাতে সাহায্য করে। ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য কম্প্রেসারটি সম্পূর্ণ অফ না করে ইনভার্টার এসিকে ধীরে ধীরে বাড়াতে বা কমাতে সাহায্য করে । এর ফলে রুমের ভিতরে ব্যবহারকারী যেমন তাপমাত্রা রাখতে চায় একদম পারফেক্ট ভাবে সেই তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য ইনভার্টার এসির বিকল্প নেই। কম্প্রেসারকে সম্পূর্ণ বন্ধ ও চালু করার প্রয়োজন প্রয়োজন পরে বিধায়  ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। ইনভার্টার এসির দাম নন ইনভার্টার এসির দাম এর চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও বিদ্যুতের খরচের দিক বিবেচনা করলে  ইনভার্টার এসি হবে বেস্ট চয়েজ। ইনভার্টার এসি শুধু মাত্র স্প্লিট টাইপের এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

 নন-ইনভার্টার এসি

নন ইনভার্টার এসিতে কোন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় এর কম্প্রেসার একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকে। এসি অন থাকলে রুম ঠান্ডা হতে থাকবে এবং বন্ধ করে রাখলে রুমের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। ঘন ঘন অন/অফ করার জন্য এসিতে প্রচুর পরিমানে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় ফলে মাস শেষে ইলেক্ট্রিসিটি বিল বেশি হয়। নন-ইনভার্টার এসি এর দাম ইনভার্টার এসি এর চেয়ে কম হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে যে কেউ নন-ইনভার্টার এয়ার কন্ডিশনার কিনতে পারে।

 মন্তব্যঃ উপরোক্ত ধারনা থেকে এয়ার কন্ডিশনারের ধরণ ও এর কাজ সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। যেকোন ধরনের বা প্রযুক্তির এসি কিনতে হলে দাম যাচাই করে এয়ার কন্ডিশনার কেনা উচিৎ। এতে করে কম দামের মধ্যে ভালো এয়ার কন্ডিশনার টি নির্বাচন করতে আপনার জন্য সুবিধা হবে।

 

By tech

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!